Friday, April 1, 2016

বৈশাখী শাড়ি

কিছুদিন পর আসছে পহেলা বৈশাখ। আপনি কি আপনার বাচ্চাদের জন্য শাড়ি কেনার কথা ভাবছেন?

আজ আমি আপনাদের বলব কিভাবে আমি আমার বাচ্চাদের জন্য বৈশাখী শাড়ি বানিয়েছি।
স্বাগত আমার শখের দুনিয়া শখের ব্লগে।

বাচ্চাদের বৈশাখী শাড়ি বানানোর বুদ্ধিটা এসেছে একটা ডিজাইনার শাড়ি দেখে। আমার বড় মেয়ের বয়স যখন পোনে দুই বছর, তার বাবা তার জন্য একটা বৈশাখী শাড়ি শখ করে কিনেছিল একটা ব্র্যান্ডের দোকান থাকে। শাড়িটা ছিল সাধারণ সূতি কাপড়ের তৈরী, আর কুচি গুলোও সেলাই করে স্কারটের মত করে জুড়ে দেয়া ছিল। শুধু মাথা গলিয়ে পরিয়ে দিলেই হল। কিন্তু সাদা শাড়ি, আর ধোয়ার পর লাল ব্লকগুলোও হালকা হয়ে গেল। তখন মনে হল, এতগুলো টাকা শুধু শুধু নষ্ট হল।

গতবার পয়লা বৈশাখে তাই আমি নিজেই কাপড় কিনে শাড়ি বানাতে শুরু করলাম।

বাচ্চাদের বৈশাখের রঙ গাঢ় হলে ভাল হয়, উৎসবের আমেজটাও আসে, আর সহজে ময়লা হবেনা। সেজন্য আমি নিয়েছি সাধারণ সুতী কাপড়-  লালের ভিতর কালো বল-প্রিন্টের কাপড়। এই কাপড় গুলি দামে সস্তা। পরতেও আরাম। বাচ্চাদের শাড়ি বানানোর জন্য একদম সঠিক পছন্দ। 
দুই মেয়ের জন্য বানাতে আমি পাঁচ গজ কাপড় কিনেছি। পাড় বানানোর জন্য সাদা কালো ছোট ফুলের প্রিন্টের আর সাদার ভিতর লাল স্ট্রাইপ দেখে এক গজ করে পাতলা সূতির কাপড় কিনেছি। আর উৎসবের ভাব আনার জন্য নিয়েছি সোনালী রঙের দেড় ইঞ্ছি পুরু লেইত- আট গজ। আমার কেনাকাটায় এই লেইস-টাই ছিল সবচেয়ে দামী। তবে শাড়ি ছোট বা নষ্ট হয়ে গেলে লেইসটা খুলে বাচ্চাদের অন্য কাপড়ে যেকোন সময়ে লাগিয়ে দেয়া যাবে।

প্রথমে পুরো কাপড়টা একসাথে থাকা অবস্থায় বড় মেয়েকে কুচি দিয়ে পরিয়ে দেখে নিয়েছি ওর কতটুকু লাগবে, সেই মাপে কাপড় দুই ভাগ করে নিয়েছি। দুই হাত বহর তাই আর আমার ৪বছরের মেয়ের জন্য কোন কাপড় কেটে খাটো করতে হয়নি। ছোটজন,৩ বছরের, ওর লম্বা অনুসারে  কাপড় আড় থেকে আড়াই ইঞ্চি মত কেটে নিতে হয়েছে।

এবার পাড় বানানোর জন্য বিপরীত রঙের কাপড় টি চার ইঞ্চি পুরু করে টুকরো করে কাটুন। পাশে পাশে জুড়ে একটি লম্বা ফিতা বানান।
পাড়ের কাপড়ের টুকরো গুলোর দুই মাথা আধা ইঞ্ছি ক্রে দুই পাশে ভেঙ্গে ইস্ত্রি করে নিন।

এবার শাড়ী বিছিয়ে তার উপর পাড়ের কাপড় জায়গামত রেখে পিন থিয়ে আটকে নি্ন। চাইলে বড় বড় ফোড় দিয়ে টাকিয়ে নিতে পারেন।

এবার মেশিনে সেলাই করে আ্টকে নিন।
এবার লেস লাগানোর পালা। পাড়ের ভিতর দিকে লেইসটি লাগান।এতে লেইসের জরির সূতা দিয়ে  বাচ্চার হাতে পায়ে খোঁচা লাগবেনা, বা লেসটি সহজে নষ্ট হবেনা।

এবার ব্লাউজ আর পেটিকোটের পালা।

আমি প্রচলিত নিয়মে ব্লাউজ বানাতে জানিনা। তাই বাচ্চার গায়ের মাপ নিয়ে তার চেয়ে ঢিলা আর লম্বা করে একটি টপস কেটেছি -জামার টপসের মত।
জামার টপসের মত ব্লাউজটির কাটা রেখেছি পিছন দিকে। এতে ব্লাউজটি পরানো আমার জন্য সহজ। জামার মত করেই টিপ বোতাম লাগিয়েছি। হাত হবে ঘটি হাতা। হাত আর কোমরে চিকন ইলাস্টিক রাবার লাগিয়েছি।এতে ব্লাউজটি আঁটসাঁট হবেনা আবার খুব ঢিলাও দেখাবে না। বাচ্চার গায়ের সাথে লেগে থাকবেনা, বাতাস চলাচল করতে পারবে, অর্থাৎ বাচ্চার জন্য আরামদায়ক। আবার খুব তাড়াতাড়ি ছোটও হয়ে যাবেনা। বছর দুয়েকের মধ্যে যে কোন  অনুষ্ঠানে আবার এইটিই তাকে পরাতে পারবেন।

পেটিকোট বানিয়েছি একদম সাধারণ ছয় ছাটের করে। এভাবে বানানো আমরা আমাদের ক্লাস এইট- নাইনের গাহস্থ্য বইতে শিখেছিলাম।

এবার অনুষ্ঠানের দিন পরানোর পালা। শাড়িটি পরিয়ে ভালো করে সেফটিপিন লাগিয়ে দিন। বাচ্চারা শাড়ি পরতে খুব ভালোবাসে। তাকে বলুন যে শাড়ি পরে তাকে খুব সুন্দর লাগছে। এতে তার আত্মবিশ্বাস অনেক বেড়ে যাবে। জুতা একদম নিচু হলে ভাল হয়। তাহলে এই নতুন পোষাক পরে হাঁটতে বাচ্চার কোন সমস্যা হবেনা।
মেলা, ঘুরাঘুরি বা দাওয়াতে বাচ্চাকে শাড়ি পরিয়ে নিয়ে যাওয়ার সময় তার আরামের দিকে খেয়াল রাখুন। সাথে পানি, রুমাল, পাখার সাথে সাথে এক সেট বাড়তি জামা রাখুন, যেন হঠাত করে শিশু ক্লান্ত বোধ করলে তাড়াতাড়ি তার জামা বদলে দিতে পারেন।

ধন্যবাদ।