Monday, November 28, 2016

গ্রিফিন্ডরের মাফলার

হ্যারি পটারের দুই রঙের মাফলার আছে। খয়েরী -সোনালী হলুদ কম্বিনেশনের।
একটায় দুইটা রঙ সমান সমান, আরেকটা খয়েরীতে হলুদ স্ট্রাইপ। এটা মনে হয় সিনিয়র ক্লাসের।
আমার ছোটভাই হ্যারি পটারের মহা ভক্ত। ওর কাছে শুনেছিলাম, গল্পের বইতো বটেই, সিনেমাতেও খুঁটিনাটি সবকিছু নাকি খুব নিখুঁত করে বানানো। সিনেমাতে কারো হাতে একটা বই বা দেয়ালে লাগানো একটা পোস্টার পর্যন্ত।আমারো হ্যারি পটার ভাল লাগে, কিন্তু এত খুঁটিনাটি লক্ষ্য করিনি কখনো। ছোটভাইয়ের আবদার রক্ষা করতে কিছু জিনিস খুঁজে পেলাম নেটে। গ্লাভস, মাফলার, প্রতি সেকশনের লোগো, সব কিছুই এত দারুণ যে বলার না।
আমার ভাই আমার কাছে গ্রিফিন্ডরের মাফলার চেয়েছে।
স্বাগত আমার শখের দুনিয়ে শখের ব্লগে।

সূতার রঙ- খয়েরি এবং কাঠালী হলুদ।
সেলাই- চেইন এবং সিংগেল ক্রোশেট
লোগোর জন্য আলাদা কাপড়, ফ্রেম, কয়েক রঙের সূতা, সুই লাগবে।
কুশি কাটার মাপ- উলের কাটা। আমাদের দেশে এমনি যে উলের কুশি কাটা পাওয়া যায়, সেটা দিয়েই হবে। মোটা কাটা নিলে সেলাই ঢিল ঢিল এবং জিনিসটা ভারী হবে। সেজন্য একটু চিকন কাটা নেয়া ভাল। আমারটার নাম্বার এগারো
প্রথমে চেইন তুলুন ২৬ থেকে ৩০ টি। যতটুকু চওড়া চান। বড় মানুষের বেলায় একটু চওড়া হলেই ভাল। ছোটরা চওড়া মাফলার ম্যানেজ করতে পারবেনা।
৩০ চেইনের এই লাইনটিই আপনার বেজমেন্ট চেইন। খয়েরি সূতা।
পরের রো গুলো শুধু সিঙেল ক্রোশেট সেলাই।
২য় রো- প্রথমে একটি চেইন তুলুন।
তারপর আগের লাইনের বেজমেন্ট চেইন থেকে একটা করে সিংগেল ক্রোশেট।
৩য় রো এর জন্য একইভাবে ১চেইন তুলে মাফলার ঘুরিয়ে নিন, সিংগেল ক্রোশেট ৩০ টি।
এভাবে দুই লাইন করলে দেখবেন একটি চমৎকার প্যাটার্ন তৈরী হচ্ছে।

এভাবে পছন্দসই দৈর্ঘ্য পেতে ৩০ থেকে ৩৬ লাইন বানান -একই রঙের।

এখন ২য় রঙ হলুদ জোড়া দেয়ার পালা।খয়েরী সূতাটা লম্বা করে কেটে নিন
এর সাথে হলুদ সূতা গিঁট দিয়ে আটকে নিন। সাধারণ বিষ গিটঠু দিলেই হবে।
বা খয়েরী সূতাটা লম্বাই রাখুন, একে ঘিরে হলুদকে পেঁচিয়ে গিঁট দিন।

গিঁট আগুপিছু করে নির্দিষ্ট ভাবে ঠিক ককরে নিন কোথা থেকে হলুদ শুরু হবে। তারপর গিঁট টি টেনে শক্ত
করুন
মাফলার সেলাই শেষে এই বাড়তি সুতাগুলো মাফলারের ভিতর দিয়ে বুনে দেয়া হবে তাই সেলাই খুলে কোন ভয় নেই।
এবার একই ভাবে এক চেইন, তিরিশ সিংগেল তুলে সেলাই করতে থাকুন।

দুই রঙের খোপ গুলি সমান হতে হবে। ফিতা দিয়ে মেপে সমান সমান করে নিলে বেশি ভাল হয়।
লক্ষ্য করুন, শেষ চৌকোটি হবে খয়েরী। মাফলার টি পছন্দসই লম্বা বানাতে পারেন।আমার বানানোটি....  ইঞ্চি।

এখন ঝালর বানান।
৩'৫" লম্বা করে দুই রঙের সুতা কেটে নিন। মাফলারের ধারের প্রতিঘরে ঝালর লাগাতে হবে।
দুটি করে একই রঙের সুতা নিন। সুতাটি দুই ভাজ করুন। কুশি কাটা মাফলারের ধারের ঘরে ঢুকিয়ে নিন। দুইভাজ করা সূতার মাঝ বরাবর কিছুদূর ঢুকিয়ে নিন।একটি লুপ তৈরী হল।এই লুপের ভিতর সুতার লেজটুকু ঢুকিয়ে টেনে নিন। এর পাশের ঝালর হবে অন্য রঙের।
সব গুলো ঝালর লাগানো হয়ে গেলে সমান সমান করে বিছিয়ে আগা গুলো মোটামুটি সমান করে কেটে নিন।
এবার মাফলারের কিনার বা ভিতরে যত বাড়তি সুতা আছে, সেগুলো কুশি কাটা দিয়েই কাঁথা ফোড়ের মত বুনে নিন। কিছুদুর গিয়ে আবার উলটা দিকে সুতাটা বুনে নিলে আর খোলার ভয় থাকবেনা। এবার সুতা কেটে নিন।
মাফলার মোটামুটি শেষ।

এবার লোগো। ভরাট সেলাই জানা থাকলে ভাল।
প্রথমে কাপড়ে লোগোটি এঁকে নিন পাতলা সাদা কাপড়ে। ফ্রেম লাগানোর সময় সাদা কাপড়টি দুই ভাজ করে নিন। তাহলে সেলাই কুঁচকাবেনা।


সেলাই হয়ে গেলে লোগোর চারদিকে অল্প বাড়তি কাপড় রেখে কেটে নিন।
লাল আর হলুদের মাঝামাঝি লোগোটি লাগিয়ে নিন, দেখুন চমৎকার লাগবে!
হ্যারি পটারের ভক্তের জন্য গ্রিফিন্ডরের তলোয়ার না হোক মাফলারই হতে পারে অমূল্য উপহার!

অসংখ্য ধন্যবাদ।



Tuesday, September 27, 2016

টুকরা কাপড়ে বানানো পাপোস

খুব সহজে পাপোস সেলাই করতে চান? খুব তাড়াতাড়ি? সেলাই মেশিনে?

স্বাগত আমার শখের দুনিয়ে শখের ব্লগে।

আজ আমি বলব কিভাবে আমি খুব তাড়াতাড়ি একটা পাপোস সেলাই করেছি। বুদ্ধিটা যদিও আমি পেয়েছি ইউটিউবের একটি ভিডিও টিউটোরিয়াল থেকে। তবে ইউটুবে দেখানো বিভিন্ন ধরণের কাপড় আমাদের দেশে সব সময় পাওয়া যায়না, তাই আমি একটু সহজীকরণ করতে চেষ্টা করেছি।

যা যা দরকার
কাপড়ের তৈরী শপিং ব্যাগ
গেঞ্জির কাপড়
সেলাই মেশিন, ১৬ নম্বরী সুই থাকলে ভাল
কেঁচি
দাগ কাটার জন্য স্কেল আর পেন্সিল, দরকার বোধ করলে।


প্রথমে আপনার পছন্দমত মাপে শপিং ব্যাগটি কেটে নিন। ইচ্ছা হলে গোল, ডিমের মত, হার্ট শেপ, পায়ের পাতা মত , অর্ধ-চন্দ্রাকৃতি হতে পারে। এটাই নিজের হাতে তৈরী জিনিসের মজা। পছন্দমত আকৃতি বা রঙের বানিয়ে নেয়া যায়।

এবার পেন্সিলে আধা ইঞ্চি থেকে পোনে এক ইঞ্চি ফাঁকা ফাঁকা করে দাগ দিয়ে নিন।

এখন গেঞ্জির কাপড় টুকরো করে নেয়ার পালা

গেঞ্জির কাপড় গুলো হবে মোটামুটি দেড় ইঞ্চি বাই দুই বা আডাই ইঞ্চি। একদম এক মাপ না হলেও চলবে।

এখন একটুকরা গেঞ্জির কাপড় লম্বালম্বি ভাঁজ করে নিন।
শপিং ব্যাগের টুকরার উপর একের পর এক টুকরা রেখে ভাজ করা টুকরাটির মাঝ বরাবর মেশিনে সেলাই করে জুড়তে থাকুন।
পছন্দমত রঙের কাপড় নিয়ে ইচ্ছামত কয়েক লেয়ার বানিয়ে ডিজাইন করে নিতে পারেন।

হয়ে গেল টুকরা কাপড়ে বানানো পাপোস। খুব নরম হয় এটি। বিছানার পাশে রেখে দিন, বাচ্চারা খুব পছন্দ করে তুলতুলে এই পাপোসটি।

অসংখ্য ধন্যবাদ।

Monday, September 26, 2016

নিজেই বানান ওভেন গ্লাভস

ওভেনের জন্য আমি যে গ্লাভস সেট টা কিনেছিলাম, সেটাতে ছিল এক টা হাতের গ্লাভস আর একটা ছোট গোল টুকরা গরম পাত্র ধরার জন্য। আমি ওভেন খুব একটা ব্যবহার করিনা। কিন্তু মনে হচ্ছিল, দুই হাতে গ্লাভস হলে বোধহয় ভারী গরম পাত্র নামাতে বেশি সুবিধা হবে। এই গ্লাভস জোড়া বানিয়েছি আমি উপহার দিতে।

আপনাদের বলছি, কিভাবে আমি জিনিসটি তৈরী করেছি।
স্বাগত আমার শখের দুনিয়া: শখের ব্লগে।

যা যা লাগবে-
কাগজ
মোটা সূতি বা গেঞ্জির কাপড়- আধাগজ
পুরানো টাওয়েল একটা
কাপড়ের শপিং ব্যাগ
সুই সুতা
কেঁচি
সেলাই মেশিন- ১৬ নম্বরী সুঁই হলে ভাল

প্রথমে হাতের মাপ নিয়ে নিন। কাগজে শুধু বুড়া আঙুলটি আলাদা করে আকুন। বাকি আঙুলের বাইরে প্রায় পোনে এক ইঞ্চি জায়গা রেখে এঁকে নিন।
কাগজটি কেটে নিন। এটাই আপনার দুই হাতের গ্লাভসের মাপ বা প্যাটার্ন। কাপড় গুলো জোড়ার আগে শুধু লক্ষ্য রাখবেন হাত অনুযায়ী সামনে ভিতরের কাপড় গুলো ঠিক মত সেলাই করছেন কিনা। তাহলে আর ডান বামের আলাদা মাপ নিতে হবেনা।

আমি এক হাতের গ্লাভসের কথাই বলছি বর্ণনার সুবিধার জন্য। দুই হাতের বানানোর সময় আপনাকে একই কাজ দুই বার করতে হবে।
অথবা দুই সময়ে বানান। তাড়াহুড়া করতে গেলে ডান বাম উল্টাপাল্টা হয়ে যায়।

বাইরের দিকে লাগানোর জন্য একটি উজ্জ্বল রঙের কাপড় বেছে নিন। এই কাপড়টি কাগজের মাপ নিয়ে আগেই কেটে ফেলবেন না।
যেহেতু আঁকাবাঁকা করে সেলাই করতে হবে, আর সেলাইয়ের সময় কাপড় সরে যায়, তাই সহজে সেলাই করার জন্য সবার বাইরের কাপড়টা বড় থাকলে সুবিধা হয়।
আর যদি কাপড় কেটে নিতে চান, তাহলে সেলাইয়ের আগে বড় বড় ফোড় দিয়ে আটকে নিন। বা পিন দিয়ে।

সবচেয়ে ভিতরে থাকবে কাপড়ের ব্যাগের কাপড়টি। মাঝে টাওয়েল। তবে আপনি টাওয়েলের বদলে অন্য সুতি কাপড় কয়েক লেয়ারে নিতে পারেন। ভিতরে ব্যাগের কাপড়টি দিলে গ্লাভসটি কুঁচকে যাবেনা বা নেতিয়ে যাবেনা, টানটান থাকবে, আর গরম ভাপও হাতে লাগবেনা।
টাওয়েল এবং ব্যাগের কাপড় কাগজের প্যাটার্ন বসিয়ে কেটে নিন।
তিন লেয়ার জুড়ে নিন। বাড়তি কাপড় কেটে নিন।
এভাবে আরো একবার।সাবধানে সামনে পিছনে কোন কাপড় হবে দেখে নিতে হবে। যে হাতের গ্লাভস বানাচ্ছেন, সেই হাতের উপর বিছিয়ে দেখে নিতে পারেন।
এবার খোপ খোপ দাগ কাটুন। সেলাই করে নিন। এতে দেখতেও ভাল হবে, কাপড় ভাল আটকে থাকবে, জিনিসটি টেকসই হবে।

এবার এক হাতের গ্লাভসের দুই লেয়ার জোড়ার পালা।
আপনি দুইভাবে সেটি করতে পারেন।
১। লেয়ার দুটির সামনের কাপড় দুটিকে একটির উপর একটি সমান সমান করে বিছান।  উলটা দিক দুটি সামনে। এখন কিনার বরাবর জুড়ে নিন।

২। যদি এতগুলো লেয়ার মেশিনে সেলাই করা না যায়, বা গ্লাভসটি আটসাট হয়ে যায়, তাহলে এই পদ্ধতিতে সেলাই করতে পারেন।
ভিন্ন রঙের এক বা দেড় ইঞ্চি কাপড়ের ফিতা নিন।



ফিতার একদিকে এই লেয়ার গ্লাভস অন্যদিকে আরেক লেয়ার লাগান। যেন সেলাই একই দিকে হয়।


এবার একই মাপের টাওয়েলের ফিতা নিন।
সুই সুঁতা দিয়ে সেলাই করে কাপড়ের ফিতার উপর দিয়ে বসিয়ে দিন।
বোতাম স্টিচ হলে ভাল হয়। লক্ষ্য করুন সেলাইয়ের আটকানো দিক টা যেন টাওয়েলের টুকরার দিকে পড়ে। তাহলে সূতা উঠবেনা।

উল্টে নিন।
এবার কব্জির দিকের বর্ডার বানানোর পালা। ভিন্ন রঙের ফিতা নিন।
হেম সেলাই দিয়ে লাগিয়ে দিন।

হয়ে গেল খুব দরকারি ওভেন গ্লাভস।
ঘরে থাকা কাপড় দিয়ে বানানো বলে খুব সাশ্রয়ী ও হোলো। আপনার যে বন্ধুটি কেক পিজ্জা বানিয়ে চমকে দিতে পছন্দ করে, তাকে এক জোড়া বানিয়ে উপহার দিয়ে বরং আপনিই তাকে চমকে দিন

অসংখ্য ধন্যবাদ। 

Thursday, August 25, 2016

অসাধ্য নয় তালের পিঠা

আচ্ছা, টোনা টুনির কাছে কি পিঠা খেতে চেয়েছিল? ঐযে, টোনা বল্ল, টুনি, পিঠা খাবো। টুনি বল্ল, কি দিয়ে পিঠা করি? চাল লাগবে, গুড় লাগবে, আরো কত কি! টোনা ছুটল বাজারে।
গল্পটা ভুলে গেছি। অনেক চেষ্টা করেও মনে করতে পারলাম না, টোনা কি পিঠা খেতে চেয়েছিল? তালের পিঠা না তো?


স্বাগতম আমার শখের দুনিয়ে শখের ব্লগে। আজ বলব কিভাবে সহজসাধ্য করা যায় 'অসাধ্য' তালের পিঠা বানানো।

ছোটবেলায় বাসায় দেখেছি, তালের পিঠা মানে মহাযজ্ঞ। তাল, চাল, গুড়, নারিকেল দুধ মিলে সকাল থেকে চলত প্রস্তুতি। এখন তো আধুনিক যন্ত্রপাতির যুগে প্রস্তুতি সারাদিনের হলেও, পরিশ্রম কমে যায় প্রায় পঞ্চাশভাগ পর্যন্ত। এখনকার মোড়ে মোড়ের মুদির দোকান বা বাজারে চালের গুড়া কিনতে পাওয়া যায়। বা খুব সহজে ব্লেন্ডারে গ্রাইন্ডারের বাটিতে কয়েক মিনিটেই চাল ভাঙ্গানোর কাজটা হয়ে যায়। তাই তালের পিঠা সত্যি বানাতে চাইলে আপনার তিনটা জিনিস লাগবে, ইচ্ছা, একটা সঠিক কর্ম পরিকল্পনা, আর সময়- মোটামুটি একদিন। কারণ পিঠাটা একটু রয়ে সয়েই বানাতে হয়।

দরকারঃ
তাল ১টা
আতপ চালঃ আধা কেজি
চিনিঃ পোনে এক কেজি
লবণঃ সামান্য
তেলঃ ভাজার জন্য
দুধ/ নারিকেল কোরানো- ইচ্ছা অনুসারে।


তৈজসঃ হাত ছড়িয়ে কাজ করার মত বড় কয়েকটা গামলা
চালনি বা নেটের ব্যাগ
কাটিং বোর্ড
সূতি কাপড়
 ব্লেন্ডার

প্রণালীঃ
প্রথমে তাল নিন।

{একই সময়ে চাল ঝেড়ে বেছে ধুয়ে আধাঘন্টার জন্য ভিজিয়ে রাখুন। তালের রস বের করার সময়টুকুতে চাল ভিজবে। এতে কাজ তাড়াতাড়ি হবে।}

তাল ধুয়ে উপরের খোসা ছিলে নিন।
কাটিং বোর্ডের উপর মৃদু কয়েকবার আঘাত করুন, তালের তিন ভাগ আলাদা হয়ে যাবে।
এখন একেক ভাগ কাটিং বোর্ডের উপর মৃদু আঘাতে থেতলে নরম করে নিন।
গামলায় অল্প পানি নিয়ে তাল কচলাতে শুরু করুন। ঘন রস বের হতে থাকবে। খুব বেশি পানি নিবেন না।
এবার আটির গায়ে গায়ে লেগে থাকা রস বের করতে একটা চালনিতে ঘষে ঘষে রস বের করে নিন।

এখন স্টিলের চালনি (সাধারণত যেটাত নুডুলসের পানি ঝরানো হয় বা আটার চালনি)-তে ছেঁকে রস থেকে আশ বের করে নিন।
চালনি না থাকলে আপনি করা নেট-ব্যাগ দিয়ে কাজ চালিয়ে নিতে পারেন।  দুইটা নেট ব্যাগ ধুয়ে একটার উপর একটা বিছিয়ে একটা দারুণ চালনি বানিয়ে ফেলতে পারেন।

{চালের দিকে খেয়াল করুন। পানি থেকে চাল তুলে চালনিতে বিছিয়ে রাখুন। পানি ঝড়ে চাল ঝরঝরে হয়ে থাকবে। মাঝে মাঝে চাল গুলি উলটে পালটে দিন।}

এখন তালের তিতকুটে ভাব দূর করার জন্য রস থেকে অতিরিক্ত পানি বের করার পালা।। এজন্য একটি সূতির ওড়না বা শাড়ির টুকরা বা গামছা ধুয়ে নিন। তালের রস এতে বেঁধে উচুস্থানে ঝুলিয়ে দিন। ফোটায় ফোটায় বাড়তি পানিটুকু বের হয়ে আসবে।

তাল থেকে পানি বের করার সময় টুকুতে আপনি চাল গুড়া করতে লেগে যান। পাটায় পিষে নিতে পারেন। তবে অনেক সময় লাগে, অনেক খাটনিরও কাজ। তাই আমি ব্লেন্ডারের গ্রাইন্ডারের বাটিতে চাল ভাঙ্গানোর কাজটা করি।
অল্প অল্প করা মেশিনের সামর্থ্য অনুযায়ী চাল নিন। প্রথমে কিছুখন স্লো ঘুরান, তারপর মিডিয়াম, পরে হাই স্পীডে ঘুরান। মাঝে মাঝে ঢাকনা খুলে গুড়া গুলি উলটে পালটে নিন। আবার কিছুখণ গ্রাইন্ড করুন।
ভালমত পেষা চালের দানা হয় একদম মিহি আর রংটাও ফকফকে সাদা।
চাল ভালমত গুড়া না হলে গুড়া গুলি চেলে নিন, বড় দানা গুলো আবার একবার গ্রাইন্ড করুন।


এখন মিশ্রণ তৈরির  পালা। মনে রাখবেন, মিশ্রণ বানিয়েই সাথে সাথে ভাজা শুরু করা যায়না, ঘন্টা খানেক ঢেকে রাখতে হয়। তাই ভাজার সময়ের ঘন্টাখানেক আগে মিশ্রণ বানান।

চালের গুড়ার সাথে অল্প (আধা কাপ মত ) পানি নিয়ে অল্প অল্প করে চিনি মিশান, রুটির আটা মাখানোর মত হাতে মিশান। এতে মিশানোটা খুব ভাল হবে। চেখে দেখুন মিষ্টি ঠিক আছে কিনা।

এরপর তালের রস মিশান। তালের রস পুরাটা নিতে যেয়েন না। আধাসের চালের গুড়ায় মোটামুটি তিন কাপ রস হলেই চলে।

ঢেকে রাখুন এক ঘন্টা।

এই সাময়ে আপনি বেঁচে যাওয়া রস জ্বাল দিয়ে বাটিতে বাটিতে ভাগ করে রেখে ঠান্ডা করে ডীপ ফ্রিজে তুলে ফেলুন। পরের বারের পিঠা বানানোর জন্য।

এখন ননস্টিক পাত্রে পর্যাপ্ত তেল ভালোমত গরম করে নিন। চা চামচে করে গোলা নিয়ে নিয়ে সমান মাপের বড়া তেলে দিতে থাকুন ।আঁচ কমিয়ে দিন। এক পাশ হয়ে এলে উলটে দিন। সোনালী- বাদামী হয়ে এলে ঝাঁঝরিতে তেল ঝরিয়ে তুলে ফেলুন ।

এইত হয়ে গেল তালের বড়া। মজাদার কুড়মুড়ে।

প্রণালী পড়ে অনেক কাজ মনে হচ্ছে? অসাধ্য মোটেও না। বাসার ছোট বড় সবাইকে কাজে নিয়ে নিন। পিঠা বানানো তখন লাগবে উৎসবের মত। তবে শখ মেটাতে আমার মত তালের বড়া বানাতে চাইলে , হ্যাঁ, কষ্ট কিছুটা আপনাকে স্বীকার করতেই হবে।

অসংখ্য ধন্যবাদ।

Friday, August 12, 2016

পুরোনো কাপড়ে নতুন কিছু

আলাদীনের আশ্চর্য প্রদীপের কথা মনে আছে? না ঘষে  দৈত্য বের হওয়ার অংশ টকু না। ওই যে, আলাদীনের দুষ্টু চাচাটা পুরানো প্রদীপের বদলে নতুন প্রদীপ বিক্রি করছিল, আর আলাদীনের বোকা সোকা মা জাদুর প্রদীপটাকে পুরোনো ময়লা দেখে হাতে নিয়ে চল্ল বাজারের দিকে, সেটা বদলে আনবে বলে?

আমার মাঝে মাঝে এমন মনে হয়। পুরানো জিনিস গুলো বদলে যদি নতুন কিছু পাওয়া যেত!

তাতো আর সম্ভব না। তাই শখ মেটাতে পুরোনো কাপড় কেটে কুটে জুড়ে আমি নতুন কিছু বানানোর খেলা খেলি। এমন কিছু বানাতে চাই, যেটার একটা প্রয়োজনীয়তা আছে সংসারে। সাধ্যেরর ভিতর সেলাইয়ের শখও মিটল আবার প্রয়োজনও মিটল।মন্দ কি?

স্বাগতম আমার শখের দুনিয়া, শখের ব্লগে।
আজ আমি আপনাদের বলব, কিভাবে আমি আমার একটি পুরানো টাওয়েল দিয়ে নতুন কিছু জিনিস বানিয়েছি।

আমার ছোট দুইটা বাচ্চা আছে। প্রায়ই ওদের জন্য নতুন টাওয়েল কিনতে হয়। তাই পুরোনো গুলো জমে যায়। টাওয়েলের টুকরা দিয়ে খুব ভালো ঘর মোছার কাপড় হয়। আর একটা টাওয়েল আমি রাখে দিয়েছিলাম, কেটেকুটে কিছু সেলাই করা যায় কিনা দেখতে। সত্যি চমৎকার দুটি জিনিস বানিয়েছি সেই টাওয়েলটা দিয়ে। সেই গল্পই বলছি আজ।

১। রুটির ম্যাট


আমি বরাবর কাটিং বোর্ডে রুটি বানাই।কারণ রুটি বানানোর কাঠের পিড়ির তিন পা আম্র কাজে খুব সমস্যা করে। শব্দ হয়, পিছলে যায়। আর কাঠের পিড়ি খুব যত্ন করে ব্যাবহার করতে হয়, যেন আচড় না পড়ে। আবার বড় করে রুটিও বানানো যায়না। হাত ছড়িয়ে কাজ করা যায়না। এর চেয়ে আমার কাটিং বোর্ডই ভাল। এক বোরডের বহু ব্যাবহার। কাটা,পেষা, বেলা, ভর্তা বানানো। ধুয়ে স্টান্ডে সোজা করে রেখে দিলেই কাজ শেষ, সাথে সাথেই শুকিয়ে যায়।
কিন্তু এই বোর্ডে সাত তাড়াতাড়ি কাটাকাটি করা গেলেও, রুটি বানানোর সময় নিচে একটুকরা কাপড় ভাঁজ করে দিলে ভালো হয়। এতে কোন শব্দ ও হয়না, বোর্ড টা পিছলে যায়না।

ভাবলাম টাওয়েলের টুকরা দিয়ে একটা বাহারী ম্যাট বানিয়ে নিলে কেমন হয়

যেই ভাবা সেই কাজ।
ভিতরে টাওয়েল আর উপরে নতুন কাপর জুড়ে বানিয়েছি আমার রুটি বানানোর ম্যাট।

প্রথমে বোর্ডের চেয়ে একটু বড় মাপ নিয়ে টাওয়েল কেটে নিয়েছি
উপরে লাগানোর নতুন কাপড় বা পুরানো ওড়না বা জামার টুকরা বিছিয়ে টান টানি করে নিয়েছি
প্রান্ত গুলো মুড়ে পিন দিয়ে আটকে নিয়েছি
এবার মেশিনে সেলাই করে আটকে নিয়েছি।
দরজার পিছনে বা দেয়ালের কোন হুকে যেন ঝুলিয়ে রাখা যায়, সেজন্য ছোট একটা ফিতা জুড়ে আংটা বানিয়ে নিন।

ব্যাস হয়ে গেল আপনার পছন্দসই ম্যাট


২। ছোট ব্যাগ
বড় ব্যাগের ভিতর ভাংতি পয়সা বা মোবাইল রাখার জন্য ছোট ব্যাগ বানাতে চান?

প্রথমে  সমান সমান করে দুই টুকরা টাওয়েলের টুকরা কেটে নিন। আমার ব্যাগের জন্য নিয়েছি মোটামুটি ৩০ সেমি * ১০ সেমির দুইটা টুকরা
তবে টাওয়েলের নিজের ধারের শক্ত অংশ বা কোন সূতার ডিজাইন করা থাকলে কেটে ফেলে দিতে হবে, কারণ এতে আপনার সেলাই করতে অসুবিধা হবে
এখন দুই টুকরা একটার সাথে আরেকটা ক্রস করে সেলাই করে আটকে নিন যেন টুকরা দুইটা একটার সাথে আরেকটা খুব ভালোমত আটকে থাকে।
এটাই আপনার ব্যাগের ভিতরের প্যাডিং

এখন বাইরের জন্য বাহারী নতুন চকচকে কাপড় নিন।
টাওয়েলের টুকরাটার চেয়ে সবদিকে আধাইঞ্চি  বেশি কাপড় রাখুন।

এখন টানটান করে উপরের কাপড়টা সেলাই করে জুড়ে দিন।

আড়াআড়ি তিন ভাঁজ করুন। যেন একটা অংশ হয় ব্যাগের ঢাকনি

হাতে দুই পাশ সেলাই করে নিন,
ঢাকনিতে একটা টিপ বোতাম লাগিয়ে নিন।

এবার অন্য রঙের সূতা দিয়ে ইচ্ছামত কারুকাজ করে সাজিয়ে নিন আপনার শখের ছোট্ট ব্যাগ।

আর বোতামের ঘরের উপর একটা কুসিতে বোনা গোলাপ আটকে দিলে তো কথাই নেই। পুরানো কাপড়ে বানানো ব্যাগটাই হয়ে যাবে এক অনন্য শিল্পকর্ম


অসংখ্য  ধন্যবাদ

Sunday, July 10, 2016

ছোট্টমনির ছোট্ট জুতা

আপনার চেনা সবচেয়ে ছোট্ট মানুষটিকে কিছু উপহার দিতে চান? যার বয়স এক থেকে তিন মাস? অথচ তার জামা, কাপড়, মালা, চুড়ি, খেলনা পাতি- সবই আছে? --সবাই সবকিছু গিফট করে ফেলেছে?
দাঁড়ান দাঁড়ান, আপনার জন্য একটা আইডিয়া বলছি। 
যদি আপনার কাছে অল্প কিছু উলের সূতা আর একটা কুশি কাটা থাকে, তাহলে মাত্র কিছুখন সময়ের মধ্যেই আপনি আপনার চেনা সবচেয়ে ছোট্ট মানুষটার জন্য বানিয়ে ফেলতে পারেন চমৎকার একজোড়া জুতা। আর আমি নিশ্চিত, এই জুতাজোড়া বড় হয়ে ও অবাক হয়ে দেখে দেখে বলবে, এত্ত ছোট্ট ছিলাম আমি? এইটুকু পা?!!

স্বাগত আমার শখের দুনিয়া শখের ব্লগে।

হ্যা আপনি ঠিকই পড়েছেন। আমি বলেছি, অল্প একটু সময়েই তৈরী করা যাবে। একেকটা জুতায় মাত্র পাচ সারির সেলাই। কতখন আর লাগবে, বলুন?!

দরকার: সূতা- উল, নরম আর হালকা রঙ হলে ভালো হয়
কাটা- নাম্বার ১১। একটু মোটা উলের কুশি কাটা।

সেলাই: চেইন, হাফ লং (half double crochet), ডাবল লং (double crochet)

প্রথম বেইজ: ১০তা চেইন তুলুন।

শেষ দুইটা চেইন ভালোমত দেখে নিন। এখন শেষ চেইন থেকে দুইটা বাদ রেখে ৩য় চেইনে কাটা ঢুকান। একটি হাফ লং তুলুন
একই ঘরে আরেকটি হাফ লং তুলুন।

পরের পাঁচটি চেইনের প্রতিটিতে একটি করে হাফ লং তুলুন।
এখন আর একটা চেইন বাকি আছে। এই ঘরে ৬টি হাফ লং তুলুন।
দেখুন সেলাইটা এই প্রান্তে একাই গোল হয়ে যাচ্ছে।

এখন চেইনের এইপাশের  সূতা বরাবর প্রতিঘরে একটা হিসাবে ৫টা হাফ লং করুন।
এখন শেষ ফাকা জায়গায়, মানে বেইজের চেইনের ঘরটিতে, যেখান থেকে দুইটা চেইনের একটা লাইন উঠে এসেছে, জায়গাটা ভাল করে দেখে নিন।
এই খানে তিনটা হাফ লং তুলুন।

বুঝতেই পারছেন, প্রথম যে দুই চেইন ছেড়ে আপনি হাফ লং এর লাইন করতে শুরু করেছিলেন, সেই দুই চেইন উচ্চতাকে মনে হচ্ছে একটা হাফ লং।

অর্থাৎ সেলাই যেভাবেই করুননা কেন, এই ওভাল তলানিতে সেলাই আছে অনেকটা এই রকম
৬-১-১-১-১-১-৬ (হাফ লং)


২য় সারি-
প্রথমে দুইটা চেইন তুলুন।
এটা আপনার পরের সেলাই গুলোর উচ্চতা।
আর এই রাউন্ড সেলাই শেষ হলে এই দুই চেইনকে মনে হবে একটা ডাবল লং।

এই লাইনের সেলাই -সব ডাবল লং
প্রথম ঘরে তুলুন ২টা
পরের প্রতিঘরে একটা করে পাচ ঘর
পরের


জুতার তলানী সেলাই শেষ।

এখনের তিন সারি হল জুতার উপরের অংশ।

৩য় সারিটা সবচেয়ে সহজ।
প্রতিঘরে একটা করে হাফ লং।

তবে ২য় লাইনের মাথার চেইনের মত অংশটার পিছনের লিপ ধরে।
সামনের লিপটি খালি থাকবে আর সুন্দর একটা প্যাটার্ন তৈরী করবে।

৩য় সারি প্রতি ঘরে একটা হাফ লং-পুরাটা।

৪র্থ সারি

৫ম সারি