আচ্ছা, টোনা টুনির কাছে কি পিঠা খেতে চেয়েছিল? ঐযে, টোনা বল্ল, টুনি, পিঠা খাবো। টুনি বল্ল, কি দিয়ে পিঠা করি? চাল লাগবে, গুড় লাগবে, আরো কত কি! টোনা ছুটল বাজারে।
গল্পটা ভুলে গেছি। অনেক চেষ্টা করেও মনে করতে পারলাম না, টোনা কি পিঠা খেতে চেয়েছিল? তালের পিঠা না তো?
স্বাগতম আমার শখের দুনিয়ে শখের ব্লগে। আজ বলব কিভাবে সহজসাধ্য করা যায় 'অসাধ্য' তালের পিঠা বানানো।
ছোটবেলায় বাসায় দেখেছি, তালের পিঠা মানে মহাযজ্ঞ। তাল, চাল, গুড়, নারিকেল দুধ মিলে সকাল থেকে চলত প্রস্তুতি। এখন তো আধুনিক যন্ত্রপাতির যুগে প্রস্তুতি সারাদিনের হলেও, পরিশ্রম কমে যায় প্রায় পঞ্চাশভাগ পর্যন্ত। এখনকার মোড়ে মোড়ের মুদির দোকান বা বাজারে চালের গুড়া কিনতে পাওয়া যায়। বা খুব সহজে ব্লেন্ডারে গ্রাইন্ডারের বাটিতে কয়েক মিনিটেই চাল ভাঙ্গানোর কাজটা হয়ে যায়। তাই তালের পিঠা সত্যি বানাতে চাইলে আপনার তিনটা জিনিস লাগবে, ইচ্ছা, একটা সঠিক কর্ম পরিকল্পনা, আর সময়- মোটামুটি একদিন। কারণ পিঠাটা একটু রয়ে সয়েই বানাতে হয়।
দরকারঃ
তাল ১টা
আতপ চালঃ আধা কেজি
চিনিঃ পোনে এক কেজি
লবণঃ সামান্য
তেলঃ ভাজার জন্য
দুধ/ নারিকেল কোরানো- ইচ্ছা অনুসারে।
তৈজসঃ হাত ছড়িয়ে কাজ করার মত বড় কয়েকটা গামলা
চালনি বা নেটের ব্যাগ
কাটিং বোর্ড
সূতি কাপড়
ব্লেন্ডার
প্রণালীঃ
প্রথমে তাল নিন।
{একই সময়ে চাল ঝেড়ে বেছে ধুয়ে আধাঘন্টার জন্য ভিজিয়ে রাখুন। তালের রস বের করার সময়টুকুতে চাল ভিজবে। এতে কাজ তাড়াতাড়ি হবে।}
তাল ধুয়ে উপরের খোসা ছিলে নিন।
কাটিং বোর্ডের উপর মৃদু কয়েকবার আঘাত করুন, তালের তিন ভাগ আলাদা হয়ে যাবে।
এখন একেক ভাগ কাটিং বোর্ডের উপর মৃদু আঘাতে থেতলে নরম করে নিন।
গামলায় অল্প পানি নিয়ে তাল কচলাতে শুরু করুন। ঘন রস বের হতে থাকবে। খুব বেশি পানি নিবেন না।
এবার আটির গায়ে গায়ে লেগে থাকা রস বের করতে একটা চালনিতে ঘষে ঘষে রস বের করে নিন।
এখন স্টিলের চালনি (সাধারণত যেটাত নুডুলসের পানি ঝরানো হয় বা আটার চালনি)-তে ছেঁকে রস থেকে আশ বের করে নিন।
চালনি না থাকলে আপনি করা নেট-ব্যাগ দিয়ে কাজ চালিয়ে নিতে পারেন। দুইটা নেট ব্যাগ ধুয়ে একটার উপর একটা বিছিয়ে একটা দারুণ চালনি বানিয়ে ফেলতে পারেন।
{চালের দিকে খেয়াল করুন। পানি থেকে চাল তুলে চালনিতে বিছিয়ে রাখুন। পানি ঝড়ে চাল ঝরঝরে হয়ে থাকবে। মাঝে মাঝে চাল গুলি উলটে পালটে দিন।}
এখন তালের তিতকুটে ভাব দূর করার জন্য রস থেকে অতিরিক্ত পানি বের করার পালা।। এজন্য একটি সূতির ওড়না বা শাড়ির টুকরা বা গামছা ধুয়ে নিন। তালের রস এতে বেঁধে উচুস্থানে ঝুলিয়ে দিন। ফোটায় ফোটায় বাড়তি পানিটুকু বের হয়ে আসবে।
তাল থেকে পানি বের করার সময় টুকুতে আপনি চাল গুড়া করতে লেগে যান। পাটায় পিষে নিতে পারেন। তবে অনেক সময় লাগে, অনেক খাটনিরও কাজ। তাই আমি ব্লেন্ডারের গ্রাইন্ডারের বাটিতে চাল ভাঙ্গানোর কাজটা করি।
অল্প অল্প করা মেশিনের সামর্থ্য অনুযায়ী চাল নিন। প্রথমে কিছুখন স্লো ঘুরান, তারপর মিডিয়াম, পরে হাই স্পীডে ঘুরান। মাঝে মাঝে ঢাকনা খুলে গুড়া গুলি উলটে পালটে নিন। আবার কিছুখণ গ্রাইন্ড করুন।
ভালমত পেষা চালের দানা হয় একদম মিহি আর রংটাও ফকফকে সাদা।
চাল ভালমত গুড়া না হলে গুড়া গুলি চেলে নিন, বড় দানা গুলো আবার একবার গ্রাইন্ড করুন।
এখন মিশ্রণ তৈরির পালা। মনে রাখবেন, মিশ্রণ বানিয়েই সাথে সাথে ভাজা শুরু করা যায়না, ঘন্টা খানেক ঢেকে রাখতে হয়। তাই ভাজার সময়ের ঘন্টাখানেক আগে মিশ্রণ বানান।
চালের গুড়ার সাথে অল্প (আধা কাপ মত ) পানি নিয়ে অল্প অল্প করে চিনি মিশান, রুটির আটা মাখানোর মত হাতে মিশান। এতে মিশানোটা খুব ভাল হবে। চেখে দেখুন মিষ্টি ঠিক আছে কিনা।
এরপর তালের রস মিশান। তালের রস পুরাটা নিতে যেয়েন না। আধাসের চালের গুড়ায় মোটামুটি তিন কাপ রস হলেই চলে।
ঢেকে রাখুন এক ঘন্টা।
এই সাময়ে আপনি বেঁচে যাওয়া রস জ্বাল দিয়ে বাটিতে বাটিতে ভাগ করে রেখে ঠান্ডা করে ডীপ ফ্রিজে তুলে ফেলুন। পরের বারের পিঠা বানানোর জন্য।
এখন ননস্টিক পাত্রে পর্যাপ্ত তেল ভালোমত গরম করে নিন। চা চামচে করে গোলা নিয়ে নিয়ে সমান মাপের বড়া তেলে দিতে থাকুন ।আঁচ কমিয়ে দিন। এক পাশ হয়ে এলে উলটে দিন। সোনালী- বাদামী হয়ে এলে ঝাঁঝরিতে তেল ঝরিয়ে তুলে ফেলুন ।
এইত হয়ে গেল তালের বড়া। মজাদার কুড়মুড়ে।
প্রণালী পড়ে অনেক কাজ মনে হচ্ছে? অসাধ্য মোটেও না। বাসার ছোট বড় সবাইকে কাজে নিয়ে নিন। পিঠা বানানো তখন লাগবে উৎসবের মত। তবে শখ মেটাতে আমার মত তালের বড়া বানাতে চাইলে , হ্যাঁ, কষ্ট কিছুটা আপনাকে স্বীকার করতেই হবে।
অসংখ্য ধন্যবাদ।
গল্পটা ভুলে গেছি। অনেক চেষ্টা করেও মনে করতে পারলাম না, টোনা কি পিঠা খেতে চেয়েছিল? তালের পিঠা না তো?
স্বাগতম আমার শখের দুনিয়ে শখের ব্লগে। আজ বলব কিভাবে সহজসাধ্য করা যায় 'অসাধ্য' তালের পিঠা বানানো।
ছোটবেলায় বাসায় দেখেছি, তালের পিঠা মানে মহাযজ্ঞ। তাল, চাল, গুড়, নারিকেল দুধ মিলে সকাল থেকে চলত প্রস্তুতি। এখন তো আধুনিক যন্ত্রপাতির যুগে প্রস্তুতি সারাদিনের হলেও, পরিশ্রম কমে যায় প্রায় পঞ্চাশভাগ পর্যন্ত। এখনকার মোড়ে মোড়ের মুদির দোকান বা বাজারে চালের গুড়া কিনতে পাওয়া যায়। বা খুব সহজে ব্লেন্ডারে গ্রাইন্ডারের বাটিতে কয়েক মিনিটেই চাল ভাঙ্গানোর কাজটা হয়ে যায়। তাই তালের পিঠা সত্যি বানাতে চাইলে আপনার তিনটা জিনিস লাগবে, ইচ্ছা, একটা সঠিক কর্ম পরিকল্পনা, আর সময়- মোটামুটি একদিন। কারণ পিঠাটা একটু রয়ে সয়েই বানাতে হয়।
দরকারঃ
তাল ১টা
আতপ চালঃ আধা কেজি
চিনিঃ পোনে এক কেজি
লবণঃ সামান্য
তেলঃ ভাজার জন্য
দুধ/ নারিকেল কোরানো- ইচ্ছা অনুসারে।
তৈজসঃ হাত ছড়িয়ে কাজ করার মত বড় কয়েকটা গামলা
চালনি বা নেটের ব্যাগ
কাটিং বোর্ড
সূতি কাপড়
ব্লেন্ডার
প্রণালীঃ
প্রথমে তাল নিন।
{একই সময়ে চাল ঝেড়ে বেছে ধুয়ে আধাঘন্টার জন্য ভিজিয়ে রাখুন। তালের রস বের করার সময়টুকুতে চাল ভিজবে। এতে কাজ তাড়াতাড়ি হবে।}
তাল ধুয়ে উপরের খোসা ছিলে নিন।
কাটিং বোর্ডের উপর মৃদু কয়েকবার আঘাত করুন, তালের তিন ভাগ আলাদা হয়ে যাবে।
এখন একেক ভাগ কাটিং বোর্ডের উপর মৃদু আঘাতে থেতলে নরম করে নিন।
গামলায় অল্প পানি নিয়ে তাল কচলাতে শুরু করুন। ঘন রস বের হতে থাকবে। খুব বেশি পানি নিবেন না।
এবার আটির গায়ে গায়ে লেগে থাকা রস বের করতে একটা চালনিতে ঘষে ঘষে রস বের করে নিন।
এখন স্টিলের চালনি (সাধারণত যেটাত নুডুলসের পানি ঝরানো হয় বা আটার চালনি)-তে ছেঁকে রস থেকে আশ বের করে নিন।
চালনি না থাকলে আপনি করা নেট-ব্যাগ দিয়ে কাজ চালিয়ে নিতে পারেন। দুইটা নেট ব্যাগ ধুয়ে একটার উপর একটা বিছিয়ে একটা দারুণ চালনি বানিয়ে ফেলতে পারেন।
{চালের দিকে খেয়াল করুন। পানি থেকে চাল তুলে চালনিতে বিছিয়ে রাখুন। পানি ঝড়ে চাল ঝরঝরে হয়ে থাকবে। মাঝে মাঝে চাল গুলি উলটে পালটে দিন।}
এখন তালের তিতকুটে ভাব দূর করার জন্য রস থেকে অতিরিক্ত পানি বের করার পালা।। এজন্য একটি সূতির ওড়না বা শাড়ির টুকরা বা গামছা ধুয়ে নিন। তালের রস এতে বেঁধে উচুস্থানে ঝুলিয়ে দিন। ফোটায় ফোটায় বাড়তি পানিটুকু বের হয়ে আসবে।
তাল থেকে পানি বের করার সময় টুকুতে আপনি চাল গুড়া করতে লেগে যান। পাটায় পিষে নিতে পারেন। তবে অনেক সময় লাগে, অনেক খাটনিরও কাজ। তাই আমি ব্লেন্ডারের গ্রাইন্ডারের বাটিতে চাল ভাঙ্গানোর কাজটা করি।
অল্প অল্প করা মেশিনের সামর্থ্য অনুযায়ী চাল নিন। প্রথমে কিছুখন স্লো ঘুরান, তারপর মিডিয়াম, পরে হাই স্পীডে ঘুরান। মাঝে মাঝে ঢাকনা খুলে গুড়া গুলি উলটে পালটে নিন। আবার কিছুখণ গ্রাইন্ড করুন।
ভালমত পেষা চালের দানা হয় একদম মিহি আর রংটাও ফকফকে সাদা।
চাল ভালমত গুড়া না হলে গুড়া গুলি চেলে নিন, বড় দানা গুলো আবার একবার গ্রাইন্ড করুন।
এখন মিশ্রণ তৈরির পালা। মনে রাখবেন, মিশ্রণ বানিয়েই সাথে সাথে ভাজা শুরু করা যায়না, ঘন্টা খানেক ঢেকে রাখতে হয়। তাই ভাজার সময়ের ঘন্টাখানেক আগে মিশ্রণ বানান।
চালের গুড়ার সাথে অল্প (আধা কাপ মত ) পানি নিয়ে অল্প অল্প করে চিনি মিশান, রুটির আটা মাখানোর মত হাতে মিশান। এতে মিশানোটা খুব ভাল হবে। চেখে দেখুন মিষ্টি ঠিক আছে কিনা।
এরপর তালের রস মিশান। তালের রস পুরাটা নিতে যেয়েন না। আধাসের চালের গুড়ায় মোটামুটি তিন কাপ রস হলেই চলে।
ঢেকে রাখুন এক ঘন্টা।
এই সাময়ে আপনি বেঁচে যাওয়া রস জ্বাল দিয়ে বাটিতে বাটিতে ভাগ করে রেখে ঠান্ডা করে ডীপ ফ্রিজে তুলে ফেলুন। পরের বারের পিঠা বানানোর জন্য।
এখন ননস্টিক পাত্রে পর্যাপ্ত তেল ভালোমত গরম করে নিন। চা চামচে করে গোলা নিয়ে নিয়ে সমান মাপের বড়া তেলে দিতে থাকুন ।আঁচ কমিয়ে দিন। এক পাশ হয়ে এলে উলটে দিন। সোনালী- বাদামী হয়ে এলে ঝাঁঝরিতে তেল ঝরিয়ে তুলে ফেলুন ।
এইত হয়ে গেল তালের বড়া। মজাদার কুড়মুড়ে।
প্রণালী পড়ে অনেক কাজ মনে হচ্ছে? অসাধ্য মোটেও না। বাসার ছোট বড় সবাইকে কাজে নিয়ে নিন। পিঠা বানানো তখন লাগবে উৎসবের মত। তবে শখ মেটাতে আমার মত তালের বড়া বানাতে চাইলে , হ্যাঁ, কষ্ট কিছুটা আপনাকে স্বীকার করতেই হবে।
অসংখ্য ধন্যবাদ।