Thursday, August 25, 2016

অসাধ্য নয় তালের পিঠা

আচ্ছা, টোনা টুনির কাছে কি পিঠা খেতে চেয়েছিল? ঐযে, টোনা বল্ল, টুনি, পিঠা খাবো। টুনি বল্ল, কি দিয়ে পিঠা করি? চাল লাগবে, গুড় লাগবে, আরো কত কি! টোনা ছুটল বাজারে।
গল্পটা ভুলে গেছি। অনেক চেষ্টা করেও মনে করতে পারলাম না, টোনা কি পিঠা খেতে চেয়েছিল? তালের পিঠা না তো?


স্বাগতম আমার শখের দুনিয়ে শখের ব্লগে। আজ বলব কিভাবে সহজসাধ্য করা যায় 'অসাধ্য' তালের পিঠা বানানো।

ছোটবেলায় বাসায় দেখেছি, তালের পিঠা মানে মহাযজ্ঞ। তাল, চাল, গুড়, নারিকেল দুধ মিলে সকাল থেকে চলত প্রস্তুতি। এখন তো আধুনিক যন্ত্রপাতির যুগে প্রস্তুতি সারাদিনের হলেও, পরিশ্রম কমে যায় প্রায় পঞ্চাশভাগ পর্যন্ত। এখনকার মোড়ে মোড়ের মুদির দোকান বা বাজারে চালের গুড়া কিনতে পাওয়া যায়। বা খুব সহজে ব্লেন্ডারে গ্রাইন্ডারের বাটিতে কয়েক মিনিটেই চাল ভাঙ্গানোর কাজটা হয়ে যায়। তাই তালের পিঠা সত্যি বানাতে চাইলে আপনার তিনটা জিনিস লাগবে, ইচ্ছা, একটা সঠিক কর্ম পরিকল্পনা, আর সময়- মোটামুটি একদিন। কারণ পিঠাটা একটু রয়ে সয়েই বানাতে হয়।

দরকারঃ
তাল ১টা
আতপ চালঃ আধা কেজি
চিনিঃ পোনে এক কেজি
লবণঃ সামান্য
তেলঃ ভাজার জন্য
দুধ/ নারিকেল কোরানো- ইচ্ছা অনুসারে।


তৈজসঃ হাত ছড়িয়ে কাজ করার মত বড় কয়েকটা গামলা
চালনি বা নেটের ব্যাগ
কাটিং বোর্ড
সূতি কাপড়
 ব্লেন্ডার

প্রণালীঃ
প্রথমে তাল নিন।

{একই সময়ে চাল ঝেড়ে বেছে ধুয়ে আধাঘন্টার জন্য ভিজিয়ে রাখুন। তালের রস বের করার সময়টুকুতে চাল ভিজবে। এতে কাজ তাড়াতাড়ি হবে।}

তাল ধুয়ে উপরের খোসা ছিলে নিন।
কাটিং বোর্ডের উপর মৃদু কয়েকবার আঘাত করুন, তালের তিন ভাগ আলাদা হয়ে যাবে।
এখন একেক ভাগ কাটিং বোর্ডের উপর মৃদু আঘাতে থেতলে নরম করে নিন।
গামলায় অল্প পানি নিয়ে তাল কচলাতে শুরু করুন। ঘন রস বের হতে থাকবে। খুব বেশি পানি নিবেন না।
এবার আটির গায়ে গায়ে লেগে থাকা রস বের করতে একটা চালনিতে ঘষে ঘষে রস বের করে নিন।

এখন স্টিলের চালনি (সাধারণত যেটাত নুডুলসের পানি ঝরানো হয় বা আটার চালনি)-তে ছেঁকে রস থেকে আশ বের করে নিন।
চালনি না থাকলে আপনি করা নেট-ব্যাগ দিয়ে কাজ চালিয়ে নিতে পারেন।  দুইটা নেট ব্যাগ ধুয়ে একটার উপর একটা বিছিয়ে একটা দারুণ চালনি বানিয়ে ফেলতে পারেন।

{চালের দিকে খেয়াল করুন। পানি থেকে চাল তুলে চালনিতে বিছিয়ে রাখুন। পানি ঝড়ে চাল ঝরঝরে হয়ে থাকবে। মাঝে মাঝে চাল গুলি উলটে পালটে দিন।}

এখন তালের তিতকুটে ভাব দূর করার জন্য রস থেকে অতিরিক্ত পানি বের করার পালা।। এজন্য একটি সূতির ওড়না বা শাড়ির টুকরা বা গামছা ধুয়ে নিন। তালের রস এতে বেঁধে উচুস্থানে ঝুলিয়ে দিন। ফোটায় ফোটায় বাড়তি পানিটুকু বের হয়ে আসবে।

তাল থেকে পানি বের করার সময় টুকুতে আপনি চাল গুড়া করতে লেগে যান। পাটায় পিষে নিতে পারেন। তবে অনেক সময় লাগে, অনেক খাটনিরও কাজ। তাই আমি ব্লেন্ডারের গ্রাইন্ডারের বাটিতে চাল ভাঙ্গানোর কাজটা করি।
অল্প অল্প করা মেশিনের সামর্থ্য অনুযায়ী চাল নিন। প্রথমে কিছুখন স্লো ঘুরান, তারপর মিডিয়াম, পরে হাই স্পীডে ঘুরান। মাঝে মাঝে ঢাকনা খুলে গুড়া গুলি উলটে পালটে নিন। আবার কিছুখণ গ্রাইন্ড করুন।
ভালমত পেষা চালের দানা হয় একদম মিহি আর রংটাও ফকফকে সাদা।
চাল ভালমত গুড়া না হলে গুড়া গুলি চেলে নিন, বড় দানা গুলো আবার একবার গ্রাইন্ড করুন।


এখন মিশ্রণ তৈরির  পালা। মনে রাখবেন, মিশ্রণ বানিয়েই সাথে সাথে ভাজা শুরু করা যায়না, ঘন্টা খানেক ঢেকে রাখতে হয়। তাই ভাজার সময়ের ঘন্টাখানেক আগে মিশ্রণ বানান।

চালের গুড়ার সাথে অল্প (আধা কাপ মত ) পানি নিয়ে অল্প অল্প করে চিনি মিশান, রুটির আটা মাখানোর মত হাতে মিশান। এতে মিশানোটা খুব ভাল হবে। চেখে দেখুন মিষ্টি ঠিক আছে কিনা।

এরপর তালের রস মিশান। তালের রস পুরাটা নিতে যেয়েন না। আধাসের চালের গুড়ায় মোটামুটি তিন কাপ রস হলেই চলে।

ঢেকে রাখুন এক ঘন্টা।

এই সাময়ে আপনি বেঁচে যাওয়া রস জ্বাল দিয়ে বাটিতে বাটিতে ভাগ করে রেখে ঠান্ডা করে ডীপ ফ্রিজে তুলে ফেলুন। পরের বারের পিঠা বানানোর জন্য।

এখন ননস্টিক পাত্রে পর্যাপ্ত তেল ভালোমত গরম করে নিন। চা চামচে করে গোলা নিয়ে নিয়ে সমান মাপের বড়া তেলে দিতে থাকুন ।আঁচ কমিয়ে দিন। এক পাশ হয়ে এলে উলটে দিন। সোনালী- বাদামী হয়ে এলে ঝাঁঝরিতে তেল ঝরিয়ে তুলে ফেলুন ।

এইত হয়ে গেল তালের বড়া। মজাদার কুড়মুড়ে।

প্রণালী পড়ে অনেক কাজ মনে হচ্ছে? অসাধ্য মোটেও না। বাসার ছোট বড় সবাইকে কাজে নিয়ে নিন। পিঠা বানানো তখন লাগবে উৎসবের মত। তবে শখ মেটাতে আমার মত তালের বড়া বানাতে চাইলে , হ্যাঁ, কষ্ট কিছুটা আপনাকে স্বীকার করতেই হবে।

অসংখ্য ধন্যবাদ।

Friday, August 12, 2016

পুরোনো কাপড়ে নতুন কিছু

আলাদীনের আশ্চর্য প্রদীপের কথা মনে আছে? না ঘষে  দৈত্য বের হওয়ার অংশ টকু না। ওই যে, আলাদীনের দুষ্টু চাচাটা পুরানো প্রদীপের বদলে নতুন প্রদীপ বিক্রি করছিল, আর আলাদীনের বোকা সোকা মা জাদুর প্রদীপটাকে পুরোনো ময়লা দেখে হাতে নিয়ে চল্ল বাজারের দিকে, সেটা বদলে আনবে বলে?

আমার মাঝে মাঝে এমন মনে হয়। পুরানো জিনিস গুলো বদলে যদি নতুন কিছু পাওয়া যেত!

তাতো আর সম্ভব না। তাই শখ মেটাতে পুরোনো কাপড় কেটে কুটে জুড়ে আমি নতুন কিছু বানানোর খেলা খেলি। এমন কিছু বানাতে চাই, যেটার একটা প্রয়োজনীয়তা আছে সংসারে। সাধ্যেরর ভিতর সেলাইয়ের শখও মিটল আবার প্রয়োজনও মিটল।মন্দ কি?

স্বাগতম আমার শখের দুনিয়া, শখের ব্লগে।
আজ আমি আপনাদের বলব, কিভাবে আমি আমার একটি পুরানো টাওয়েল দিয়ে নতুন কিছু জিনিস বানিয়েছি।

আমার ছোট দুইটা বাচ্চা আছে। প্রায়ই ওদের জন্য নতুন টাওয়েল কিনতে হয়। তাই পুরোনো গুলো জমে যায়। টাওয়েলের টুকরা দিয়ে খুব ভালো ঘর মোছার কাপড় হয়। আর একটা টাওয়েল আমি রাখে দিয়েছিলাম, কেটেকুটে কিছু সেলাই করা যায় কিনা দেখতে। সত্যি চমৎকার দুটি জিনিস বানিয়েছি সেই টাওয়েলটা দিয়ে। সেই গল্পই বলছি আজ।

১। রুটির ম্যাট


আমি বরাবর কাটিং বোর্ডে রুটি বানাই।কারণ রুটি বানানোর কাঠের পিড়ির তিন পা আম্র কাজে খুব সমস্যা করে। শব্দ হয়, পিছলে যায়। আর কাঠের পিড়ি খুব যত্ন করে ব্যাবহার করতে হয়, যেন আচড় না পড়ে। আবার বড় করে রুটিও বানানো যায়না। হাত ছড়িয়ে কাজ করা যায়না। এর চেয়ে আমার কাটিং বোর্ডই ভাল। এক বোরডের বহু ব্যাবহার। কাটা,পেষা, বেলা, ভর্তা বানানো। ধুয়ে স্টান্ডে সোজা করে রেখে দিলেই কাজ শেষ, সাথে সাথেই শুকিয়ে যায়।
কিন্তু এই বোর্ডে সাত তাড়াতাড়ি কাটাকাটি করা গেলেও, রুটি বানানোর সময় নিচে একটুকরা কাপড় ভাঁজ করে দিলে ভালো হয়। এতে কোন শব্দ ও হয়না, বোর্ড টা পিছলে যায়না।

ভাবলাম টাওয়েলের টুকরা দিয়ে একটা বাহারী ম্যাট বানিয়ে নিলে কেমন হয়

যেই ভাবা সেই কাজ।
ভিতরে টাওয়েল আর উপরে নতুন কাপর জুড়ে বানিয়েছি আমার রুটি বানানোর ম্যাট।

প্রথমে বোর্ডের চেয়ে একটু বড় মাপ নিয়ে টাওয়েল কেটে নিয়েছি
উপরে লাগানোর নতুন কাপড় বা পুরানো ওড়না বা জামার টুকরা বিছিয়ে টান টানি করে নিয়েছি
প্রান্ত গুলো মুড়ে পিন দিয়ে আটকে নিয়েছি
এবার মেশিনে সেলাই করে আটকে নিয়েছি।
দরজার পিছনে বা দেয়ালের কোন হুকে যেন ঝুলিয়ে রাখা যায়, সেজন্য ছোট একটা ফিতা জুড়ে আংটা বানিয়ে নিন।

ব্যাস হয়ে গেল আপনার পছন্দসই ম্যাট


২। ছোট ব্যাগ
বড় ব্যাগের ভিতর ভাংতি পয়সা বা মোবাইল রাখার জন্য ছোট ব্যাগ বানাতে চান?

প্রথমে  সমান সমান করে দুই টুকরা টাওয়েলের টুকরা কেটে নিন। আমার ব্যাগের জন্য নিয়েছি মোটামুটি ৩০ সেমি * ১০ সেমির দুইটা টুকরা
তবে টাওয়েলের নিজের ধারের শক্ত অংশ বা কোন সূতার ডিজাইন করা থাকলে কেটে ফেলে দিতে হবে, কারণ এতে আপনার সেলাই করতে অসুবিধা হবে
এখন দুই টুকরা একটার সাথে আরেকটা ক্রস করে সেলাই করে আটকে নিন যেন টুকরা দুইটা একটার সাথে আরেকটা খুব ভালোমত আটকে থাকে।
এটাই আপনার ব্যাগের ভিতরের প্যাডিং

এখন বাইরের জন্য বাহারী নতুন চকচকে কাপড় নিন।
টাওয়েলের টুকরাটার চেয়ে সবদিকে আধাইঞ্চি  বেশি কাপড় রাখুন।

এখন টানটান করে উপরের কাপড়টা সেলাই করে জুড়ে দিন।

আড়াআড়ি তিন ভাঁজ করুন। যেন একটা অংশ হয় ব্যাগের ঢাকনি

হাতে দুই পাশ সেলাই করে নিন,
ঢাকনিতে একটা টিপ বোতাম লাগিয়ে নিন।

এবার অন্য রঙের সূতা দিয়ে ইচ্ছামত কারুকাজ করে সাজিয়ে নিন আপনার শখের ছোট্ট ব্যাগ।

আর বোতামের ঘরের উপর একটা কুসিতে বোনা গোলাপ আটকে দিলে তো কথাই নেই। পুরানো কাপড়ে বানানো ব্যাগটাই হয়ে যাবে এক অনন্য শিল্পকর্ম


অসংখ্য  ধন্যবাদ